একটি দেশে যেমনিভাবে রাস্তাঘাট, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটে। তেমনিভাবে বিভিন্ন মিশনারি, চ্যারিটি, এন.জি.ও. র পরিবর্তন ঘটে অর্থাৎ তাদের উন্নতি হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, রাস্তা-ঘাট বা কর্মসংস্থাগুলোর উন্নতি পেপার-পত্রিকা বা টিভির হেডলাইনে বড় করে দেখানো হলেও বিপরীতে ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে বিভিন্ন মিশনারি, চ্যারিটি, এন.জি.ও গুলোর উন্নতি পরোক্ষভাবে আমাদের চোখের আড়াল করা হয়।
তো চলুন, আমরা কিছু সত্য উদঘাটন করি।
আমরা যদি একটু ভালভাবে লক্ষ্য করি, তবে দেখতে পাবো। বিভিন্ন খ্রিষ্টান-মিশনারি, খ্রিষ্টান-চ্যারিটিসহ ইসকন; পূর্বে শুধুমাত্র পার্বত্যাঞ্চলগুলোতেই তাদের বিয়ে-শাদি বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতো। তবে বর্তমানে দেখা যায় তারা সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নানান উৎসব করছে।
দিন কয়েক আগে আমি এককাজে নরসিংদী বাজারে যাই। যাওয়ার সময় আশেপাশে লক্ষ্য করিনি, আসার সময় তো চোখ প্রায় চড়কগাছ। দেখি, রাস্তার পাশে একটু পর পর ব্যানার টাঙানো “ইসকন রথযাত্রা” এটা ভারতের একটি হিন্দুত্যবাদী সংস্থা, তারা অসহায় মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করে। অথচ গত দু’বছর আগেও নরসিংদীতে তাদের কোনো নামলেশ ছিল না। বর্তমানে তারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা তো এক জেলার অবস্থা। অন্যান্য জেলার অবস্থা এর থেকেও করুণ।
ঢাকায় এমনও জায়গা রয়েছে যেখানে প্রবেশ করলে বোঝার উপায় নেই যে, এটা কি বাংলাদেশ, নাকি খ্রিষ্টান কোনো রাষ্ট্র! ঐ এলাকায় কোন মুসলমান নেই। এলাকার রাস্তাঘাট খুব উন্নত; বেশ কয়েকটি গির্জাও রয়েছে। দেখলে মনে হয়, আকর্ষণীয় একেকটা গির্জা তৈরি করতে কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। প্রতিটি গির্জায় একজন পোপ থাকেন যাদেরকে তারা ফাদার বলে থাকে। তাদের একজন বলেন, আমেরিকা থেকে প্রতি মাসে আমাদের জন্য টাকা আসে। আমাদের মূল কেন্দ্র আমেরিকায়, সেখান থেকে আমাদের খরচাদি দেয়া হয়। আমাদেরকে যেভাবে বলা হয় আমরা সেভাবেই কাজ করি। আমেরিকায় আমাদের প্রধান ফাদার রয়েছে যিনি এসব কাজের তদারকি করেন।
প্রত্যন্ত অঞ্চল; যেমন নেত্রকোনার কথা বলি, যেখানে তারা কাজ করে অন্য পদ্ধতিতে। একটু পর পর উঁচু টিলা, প্রত্যেকটার উপর একটা করে গির্জা আছে। একেক গির্জা থেকে তারা আশপাশের দশটা বাড়ির খোঁজ-খবর রাখে। বাড়ির মানুষগুলো কখন কী করছে, কোথায় যাচ্ছে? কারো যদি কোন সমস্যা থাকে, সে অনুযায়ী তাদের প্রয়োজন পূর্ণকরে দেয়া হয়। আর এভাবে আস্তে আস্তে তারা খ্রিস্টবাদের দিকে ধাবিত হতে থাকে।
রাতে যুবকদের হাতে মদ-গাঞ্জা ইত্যাদি ধরিয়ে দিয়ে যে বাড়িতে যুবতী মেয়ে আছে ঐ বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। তারা মাতাল হয়ে, ঘরে ঢুকে মা-বাবার সামনে মেয়েকে ....। এ হলো নেত্রকোনার অবস্থা। হতে পারে অন্যান্য জেলায় এমন বা এর চেয়েও নিম্নমানের কার্যক্রম অব্যহত আছে।
এখন চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চল নিয়ে একটু পর্যালোচনা করা যাক।গবেষণা তথ্যে শান্তিচুক্তির ২৫ বছরে পার্বত্যাঞ্চলে ধর্মীয় রুপান্তরের ভিন্ন চিত্র পরিস্ফূটিত হয়। ঢালাওভাবে একটা প্রোপাগান্ডা দেয়া হয় যে, পার্বত্যাঞ্চলে ইসলামিকরণ করা হচ্ছে। বাস্তবে এটি অবাস্তব বলে প্রতীয়মান হয় যে, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থেএ অবাস্তব প্রচারণার সঙ্গে পার্বত্যাঞ্চলের বিন্দুমাত্র মিল নেই। বরং বিদ্যমান বাস্তবতা ও তথ্যের আলোকে পার্বত্যাঞ্চলে ধর্মীয় রুপান্তরের ভিন্ন এক চিত্র সামনে উঠে আসে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পূর্ব সময়ে সেখানে মসজিদ ছিল ৭৫৬টি, মন্দির ছিল ২৭০টি, প্যাগোডা ছিল ১১২৯টি, গির্জা ছিল ২৭৪টি। কিন্তু শান্তি চুক্তির পর এসবের মধ্যে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। যেমন মসজিদ নির্মিত হয়েছে ৬৭৫টি, মন্দির ১৭৬টি, প্যাগোডা ৫৪১টি, গির্জা ৪৪০টি।
এসব তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে মসজিদের সংখ্যা ১৪৩৫টি, মন্দির ৪৪৬টি, প্যাগোডা ১৬৫০টি, আর গির্জার সংখ্যা ৭১৪টি। যদিও মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে গির্জা বৃদ্ধি পেয়েছে চারগুণ। গির্জার সংখ্যা বৃদ্ধির হার পার্বত্যাঞ্চলে ইসলামিকরণ প্রচারণাকে মিথ্যা ও খ্রিস্টানকরণ তথ্যকে সত্য বলে প্রমাণ করে।
গবেষনা তথ্যে আরো জানা যায়, শান্তি চুক্তির পর ১৯৯৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৩৪৪ জন খ্রিষ্টান হয়েছে বৌদ্ধ ও হিন্দুধর্ম হতে। অন্যদিকে মুসলমান হয়েছে মাত্র ৪৫০ জন, হিন্দু ৭৬ জন (এ তথ্য জনকন্ঠ; ২৪ এপ্রিল ২০২১, হতে পাওয়া।) গত ৩০ বছরে অর্থাৎ ১৯৯১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সরকারী আদমশুমারীর তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রামে খ্রিষ্টানকরণ এর হার সর্বাধিক।
এখন লক্ষ করার বিষয় হচ্ছে! এ তথ্যগুলো থেকে আমরা মোটামুটি অনুমান করতে পারি, কিভাবে তারা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের অসহায় মুসলমান ভাইদেরকে তাদের বলির পাঠা বানাচ্ছে, আর আমাদের অসহায় মুসলমান ভাইয়েরা দ্বীনের সঠিক দাওয়াত না পাওয়ার কারণে তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে।
এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের দ্বীন, দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে, অন্ধকারের অতল গহ্বরে আটকে থাকা নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষদেরকে বের করে এনে চির শান্তি-মুক্তির পথ দেখানো। অন্যথায়, একদিন এমন আসবে! যখন আরাকান, কাশ্মীরের মত নিজ মাতৃভূমি ত্যাগ করে অন্যত্র পালাতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে হেফাজত করুন।
অবশ্য এটা প্রশংসার দাবি রাখে, বর্তমানে কিছু দ্বীনিভাই আছে, যাঁরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে দ্বীনের স্বার্থে এ রাস্তায় কাজ করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তাদেরকে এবং তাদের পরিবার-পরিজনদেরকে সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করুন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকেও নিঃস্বার্থভাবে দ্বীদের খেদমত করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন