Header Ads

Header ADS

সাজেক ভ্যালীতে একদিন

 

এবার ঈদের পরের সময়টা কেটেছে একটুভিন্ন রকম, ঈদ কেটেছে সবার সাথে খুব খুশিতে। পূর্ব থেকেই ইচ্ছে ছিল কোথাও সফরে যাওয়ার। কিন্তু সময় সুযোগ হয়ে উঠেনি; লেখাপড়া ও অন্যান্য ব্যস্ততার কারণে। ঈদ শেষ হতেই কয়েকজন সাথী আমাকে বলল, কোথাও সফরে যাবো কি না? খুশিতে আমি আত্মহারা, এ অপেক্ষায়ই তো ছিলাম। তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলাম। তারপর নির্ধারিত দিনে মা-বাবার অনুমতি সাপেক্ষে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রওনা দিলাম খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। 

রাত বাজে সাড়ে দশটা। গাড়ি চলছে তো চলছেই, রাস্তা আর ফুরায় না। রাত তিনটায় এমন এক জায়গায় আমরা পৌঁছলাম, যেখানে রাত বারটার পর থেকে ফজরের আযান পর্যন্ত সামনে অগ্রসর হওয়ার কোনো অনুমতি নেই। সেখানে গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে আমাদের ভোর হয়, এবং কোথা থেকে যেন আযানের ধ্বনি এসে আমাদের কানে পৌঁছায়, তখন ঘুম থেকে জেগে মসজিদ অন্বেষণে বের হলাম। মসজিদ পাওয়ার পর সালাত আদায় করে পুনরায় রওনা দিলাম উদ্দেশিত গন্তব্যের দিকে, সকাল যখন আটটা তখন আমরা প্রথম গন্তব্য অর্থাৎ খাগড়াছড়িতে পৌঁছালাম। সেখান থেকে আরেকটি গাড়িতে করে রওনা দিলাম সাজেকের দিকে। পাহাড় চিরে আঁকাবাকাঁ রাস্তায় যখন গাড়ি চলছিল তখন মনে হচ্ছিল এই বুঝি গাড়িটা উল্টে কয়েক’শ ফুট নিচে পরে যাবে। যত সামনে অগ্রসর হচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল উপরে ওঠার রাস্তা ততই দীর্ঘ হচ্ছে। এমনকি তিন মাইল পর্যন্ত শুধু উপরেই উঠতে হয়েছে। এক জায়গায় যাত্রা বিরতি দিলে সেখানে দোকানের স্বল্পতার কারণে একবোতল পানি কিনতে গুনতে হয়েছিল দ্বিগুণ টাকা। আবার যাত্রা শুরু হয়, অবশেষে ৭০ কি.মি. পথ অতিক্রম করে সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উপরে সবচেয়ে উঁচুপাহাড়ের মধ্যে সাজেক উপত্যকায় আমরা পৌঁছলাম। 

একটি হোটেলে উঠলাম যা পাহাড় থেকে আরো উপরে ছিল। রুমের বেলকুনীতে দাঁড়ালে মনে হতো যেন এভারেস্টের শীর্ষে দাঁড়িয়ে আছি। দৃশ্যটি এতই মনোমুগ্ধকর ছিল যা হৃদয়কে বিমোহিত করে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে বের হলাম কোলাহলমুক্ত সবুজাভ এ পরিবেশে হাঁটতে। কোন যানবাহনের ব্যবস্থা যেহেতুনেই, তাই হেঁটেই ঘুরতে লাগলাম। আরো উপরে অবস্থিত একটা মসজিদ চোখে পড়ল, যেটা খুবই সুন্দর ছিলো। আসরের নামাযটা এ মসজিদেই আদায় করলাম। তারপর মাগরীব পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে নির্মল বাতাসে ঘোরাঘুরি করলাম। মাগরিবের পরে রুমে যেতেই দেখি পুরো রুম ভরা কুয়াশা।

বেলকুনিতেও বেশ কুয়াশা জমেছে। ইশার নামাযটা জামাতে আদায় করেই শুয়ে পরলাম। ফজরের পর যখন হাঁটতে বের হলাম, হালকা গরমের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও চারিদিকে এমন কুয়াশা জমেছিল যেন মেঘ নিচে নেমে এসেছে, হাত দিলেই ভিজে যাচ্ছিলো। একটু পরে ঘন কুয়াশা ভেদ করে সূর্যটা উঁকি দিল, যার ফলে কুয়াশাগুলো পূর্ণদৃশ্যমান হয়ে ওঠে। 

এরপর সেখান থেকে খাগড়াছড়িতে এসে রিচাং ঝর্ণার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করলাম। কিভাবে পানি গড়িয়ে পরছে অনবরত? যার বিশ্রামের কোন প্রয়োজন নেই! সৃষ্টিকর্তার এমন অপরূপ সৃষ্টিগুলো অবলোকন করলে তাঁর অস্তিত্বের কথা স্মরণ হবেই।

আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সকলকে বিশ্ব সফর করে ঈমান দৃঢ় করার এবং জ্ঞান অর্জনের তৌফিক এনায়েত করুন। আমিন।


জুনাইদ বিন আমিন

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.