ইনভেস্টিগেশন ২
ঈদ মানেই আনন্দ। মুসলমানদের উৎসব। বিচিত্র এ পৃথিবীতে ঈদের দিনে কেউ সুখে থাকে, এ দিনেও কেউ থাকে দুঃখে। আমাদের উচিত দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানো। ঈদের দিনেও যাদের নতুন পোশাক পরার সামর্থ্য নেই, তাদের পোশাকের প্রয়োজন মেটানো।
যদি আজ উচ্চশ্রেণির লোকগুলো এভাবে চিন্তা করত এবং তাদের যাকাত পরিপূর্ণভাবে আদায় করত। তাহলে ঈদের দিন কাউকে মসজিদ বা ঈদগাহের পাশে ভিক্ষা করতে দেখা যেত না।
যাইহোক, এখন আসল কথায় আসা যাক। ঈদের পরদিন; বাড়ি ভর্তি মেহমান। বিকেল বেলায় ভাইয়া সহ তিনজন মিলে হাঁটতে বের হলাম। যেহেতু দেশের বাড়িতে থাকা হয় না, তাই ঠিক কোথায় কি আছে, চিনি না। এবার ইচ্ছা জাগল, নিজের গ্রামে বা আশপাশের গ্রামে কোথায় কি আছে তা ভালভাবে দেখব। মনে মনে ভাবলাম, কোনো খ্রিস্টান মিশনারী বা খ্রিষ্টান স্কুল আছে কিনা?
প্রায় বিশ মিনিট হেঁটে বাজার পেরিয়ে ‘পশ্চিম-সাহেরখালী’ পৌঁছলাম। এবার মূল গ্রামের ভিতরে যাওয়ার পালা। ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নতমানের রাস্তা বলে কথা! রাস্তায় পা দিতেই মনে হলো আমি ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। যে পরিমাণ কাঁদা..। একদিন বৃষ্টি হলে আগামী দশদিন পরও বোঝা যায়, এখানে বৃষ্টি হয়েছিল। এতো সংস্কারপূর্ণ রাস্তা! পা রাখার জো নেই। তিনি তো বলে বেড়ান, ‘বাংলাদেশ এখন বিদেশের যেকোনো দেশের জন্য উন্নয়নের রোল-মডেল’। আমার মনে হয়, কেউ এ সমাজের আশপাশটা ভালোভাবে পরখ করলে, এ বয়ানের অসারতা তার সামনে উন্মোচিত হয়ে যাবে। কিভাবে দু’টাকার উন্নয়ন করে দশটাকার কথা বলে বেড়ায়। তার উদাহরণ তো আমাদের আশেপাশে অহরহ আছে।
যা হোক, যাওয়ার পথে একটা স্কুল চোখে পড়ল। নিচতলা বেশ উঁচু; তাতে কোনো কক্ষ নেই, হয়তো উপরে আছে। এখানকার বেশিরভাগ স্কুলই ব্রিটিশ আমলে এভাবে তৈরি হয়েছে। যেন বন্যা হলে মানুষ উঁচু স্থানে এসে আশ্রয় নিতে পারে। ২০-২৫ মিনিট হাঁটার পর একটি খাল পেলাম। বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওপারে গেলাম। খালের এ পাড়ে তিনটা বাড়ি ছাড়া আর কোন ঘর-বাড়ি নেই। গ্রামে হিন্দু মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষ বসবাস করে। তারা যদিও ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী, কিন্তু তাদের মাঝে কোনো ধরণের ঝগড়া-ফ্যাসাদ নেই, আছে একতা। গ্রামে কোনো মসজিদ নেই; ছোট একটা মাদ্রাসা আছে। শুকরিয়া! এ গ্রামে এখনো খ্রিস্টানদের কালো ছায়া পড়েনি।
পরের দিন সকালে বাজার করার জন্য ‘আবুতরাব’ যাব। আবুতরাব বাজার আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ৬/৭ কি. মি. দূর। তা-ও পায়ে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সকাল ন’টায় আমি আর ভাইয়া নিজ গ্রাম পেরিয়ে পরের গ্রামে পা রাখতেই এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভূত হলো। আসলে গ্রামটার প্রকৃতি ও স্নিগ্ধ হাওয়া মন কেড়ে নেয়ার মতো। নামও এমনই, ‘মায়ানী’। যদি ব্যাখ্যা করি, দু’ভাবে করতে পারি।
এক. গ্রামের নাম যেমন ‘মায়ানী’ ঠিক তেমনি এর পরিবেশটাও মায়াময় তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মনোরম দৃশ্য, স্নিগ্ধ সমীরণ মায়ায় আচ্ছাদিত যেন। এমনকি শীতকালে অনেক পর্যটক প্রকৃতির মায়ায় এখানে ভীড় জমায়।
দুই. ‘মায়ানী’ নামের মতো গ্রামটাও ঠিক মায়াজালে আটকানো। গ্রামে প্রবেশের একটু পরই একটা গির্জা দেখতে পেলাম। আরেকটু পরে একটা বৌদ্ধমন্দির। ঈদের সময়, হয়তো তাই বন্ধ। এ গ্রামে খ্রিস্টান থেকে বৌদ্ধদের তৎপড়তা লক্ষ্য করা যায়। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলে বলল, এলাকা জুড়ে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সামনের এলাকার এক অংশজুড়ে মুসলমান বাস করে, আরেক পাশে হিন্দুরা। আর মাঝে-মাঝে খ্রিস্টানরা থাকে। তারা নির্দিষ্ট কোনো এলাকা জুড়ে থাকে না।
পুরো গ্রাম হেঁটেই পার হলাম। গিজার্, কিয়াং (বৌদ্ধমন্দির) দেখতে পেলেও, একটা মসজিদও পেলাম না। রাস্তার পাশেও নেই, হতে পারে গ্রামের ভিতরে আছে। কিন্তু না, পেলাম না। আফসোস! এভাবে আর কতদিন? মসজিদ ছাড়া মুসলিম বসতি কিভাবে থাকে? আমাদের উচিত দেশের আনাচে-কানাচে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে ছড়িয়ে যাওয়া। যেভাবে খ্রিস্টান মিশনারি ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, আগামীতে হয়তো দেখা যাবে পুরো দেশেরই এ দুরাবস্থা।
গত ডিসেম্বরে এক দৈনিক পত্রিকায় এসেছে, ২০২২ সালে খ্রিস্টানরা সবচয়ে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণভাবে ক্রিসমাস-ডে পালন করেছে। এর আগে কখনো বাংলাদেশে এতো আয়োজন করে বড়দিন পালন করা হয়নি। খ্রিস্টান মিশনারিরা এটাও ঘোষণা দিয়েছে, ‘আগামী ৫০ সালের বাংলাদেশ হবে একটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র’।
অন্যদিকে দেশের আলেম সমাজ একের পর এক নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন; সাধারণ জনগন হরেকরকম দুর্ভোগের ও সংকটের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। মানুষের জান-মালের নেই কোনো নিরাপত্তা। রাস্তাঘাটে মেয়েদের ইভটিজিং করা যেন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারিদিকে গুম, খুন, ধর্ষন, ন্যায়বিচারহীনতা এমন ভয়ংকরভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে, তা নিয়ে ভাবলেও গা শিউরে উঠে।
মাদ্রাসাছাত্রকে হাসপাতালে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, নেই কোনো বিচার। ক্ষমতাসীন দলের কথিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছে মাদ্রাসাছাত্রকে। অথচ নাগালের আশেপাশে থাকলেও দোষীদের গ্রেফতার করা দূরের কথা, এর জন্য কোন তদন্ত কমিটিও গঠিত হয় না।একান্নব্বই শতাংশ মুসলমানের রাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতার অজুহাতে মানবতার দূত মহানবী সা. কে গালি দিয়ে শাতিমে রাসূল বলে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে-ফিরছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে মেয়েদের হিজাব পরিধানকে নিষিদ্ধ করে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে সরকার এবং সচেতন মহলের বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া নেই, উদ্বেগ নেই; যেন ‘উন্নয়ন’ নামক আধুনিক জাহিলিয়্যাতের অন্ধকার ঘেরা দেশে বাস করছি আমরা।
মাদানী রহ. একবার বলেছিলেন, ‘বাংলার তিন দিকে ভারত নামক হিংস্র শকুন আর একদিকে বিক্ষুব্ধ বঙ্গোপসাগর। এমতাবস্থায় উপরওয়ালা ছাড়া তোমাদের আর কোন পথ নেই’।
আল্লাহ তা‘আলা যেন এই দেশ, জাতি, মুসলমানদের হেফাজত করেন, আমিন।
কোন মন্তব্য নেই