আল্লাহ্ তাআ’লা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! ইহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা নিজেরাই একে অন্যের বন্ধু’ (সূরা মায়িদা- ৫৭)।
বর্তমান ইহুদি-নাসারা বিশ্ব মানচিত্র থেকে ইসলাম ও মুসলিম মিল্লাহ্কে চিরতরে মুছে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। তারা নতুন ভাবে ইতিহাসে ভয়াবহ চক্রান্তে সকল আয়োজন সম্পন্ন করতে চলছে। বর্তমান মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা গোষ্ঠির নিষ্ঠুর উপহাসের শিকার আরব বিশ্ব। সেখানে সি.আই.এ, আমেরিকা ও ইসরাইলের যৌথ প্রচেষ্টায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে একঢিলে দুই নয়, বহুপাখি শিকার করে চলছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনী। তিউনিসিয়া থেকে মিশর অতঃপর লিবিয়াতে নিজেদের নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে। ইরান-সিরিয়ার জন্য চলছে ছুরি ধার। গণতন্ত্রের নামে একদিকে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে ক্ষমতার মসনদে নিজেদের তল্পিবাহক সেবা দাস পুতুল সরকার বসিয়ে রেখে আরববিশ্ব থেকে তেল লুন্ঠনের আয়োজন করছে। স্বার্থ অর্জনের উদ্দেশ্যে কিভাবে ইহুদি-নাসাররা উঠে পড়ে লেগেছে। এদের মধ্যে খৃষ্টান মিশনারীরা, যারা ধর্মীয় ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে প্রভাব বিস্তার করে আসছে অনেক আগে থেকে। মুসলমানদেরকে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে। এসব অপচেষ্টা শুধু মুসলমানদের ক্ষেত্রে করছে না বরং হিন্দু, বৌদ্ধদের ক্ষেত্রেও এরূপ অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। মোট কথা, তারা সবাইকে নিজেদের অন্তর্ভূক্ত করতে চায়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে গারো, হাজং এবং সিলেটের পাহাড়ী অঞ্চলে বাস করে খাসিয়া উপজাতি। আর ঐদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাস করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি উপজাতি। সবমিলিয়ে প্রায় ৪৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির বিশ লাখ মানুষ শতশত বছর ধরে বাংলাদেশের সীমান্ত ও পাহাড়ী অঞ্চলে বসবাস করছে। এ নৃগোষ্ঠিগুলো সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাদের এই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ আমল থেকেই মিশনারীরা সেখানে অসংখ্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করছে।তাদের মূলনীতি অনুযায়ী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলো সাধারণত ধর্মের কেন্দ্র হয়। সে অনুযায়ী গীর্জা তাদের মূলকেন্দ্র হওয়ার কথা। কিন্তু গীর্জার মাধ্যমে তারা খুব কম মানুষকেই খৃষ্টান বানায়। তাদের খৃষ্টধমর্ প্রচারের মূলকেন্দ্র হলো- মিশনারী হাসপাতাল, মিশনারী স্কুল এবং এন. জি. ও. অর্থাৎ সাহায্য সংস্থা। এছাড়াও তারা বাংলাদেশের অন্যান্য দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে মিশনারী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে মানুষকে খৃষ্টান বানানোর ঘৃণ্য কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় খৃষ্টান মিশনারীরা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে আসছে। যা এ সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, তবে প্রমাণস্বরূপ দু’টি তথ্য উল্লেখ করা হলো—
এক. চট্টগ্রামের কালুরঘাট এলাকায় শুধু একটি হাসপাতালের মাধ্যমে প্রায় চল্লিশহাজার স্থায়ী হিন্দু-মুসলমান খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছে।
দুই. ১৯৫৫ সালে কক্সবাজার জেলার মানুযঘাটে মিশনারীরা খৃষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে দশহাজার যুবক, শিশু ও পোষ্য সহ মোট চল্লিশহাজার মানুষকে খৃষ্টান বানিয়েছে। সেই সাথে পূনর্বাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই নব্য খৃষ্টানদের চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে সংস্থাপন করা হয়েছে।
হায়! হায়! শুধুমাত্র দু’টি হাসপাতালের অবস্থা যদি এমন হয় তাহলে গোটা বাংলাদেশে আনাচে কানাটে ছড়ানো ছিটানো হাসপাতালের অবস্থা তো সহজেই বোঝা যায়। তারা তো উপজাতিতে সীমাবদ্ধ নয়। খৃষ্টানধর্ম প্রচারের মূল টার্গেট এখন সহজ সরল মুসলিমরা। হিন্দু ও বৌদ্ধদের খৃষ্টান বানাতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে একত্ববাদী মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করতে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। তারা দেখলো, মুসলিমরা দরিদ্র-গরীব হতে পারে ক্ষুধা-অনাহারে থাকতে পারে, কিন্তুকিভাবে তাদেরকে ধর্মান্তরিত করা যায়। তাই সুচতুর মিশনারী তাদের কৌশলও পাল্টে ফেলেছে। যেমন:– ১. ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে কুরআন হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে এবং আল্লাহর চিরন্তর কালাম ‘এসো জান্নাতের পথে চলি’ ইত্যাদি বই তারা প্রকাশ করছে। এগুলোতে ইসলামি নাম ব্যবহার করে জায়গায় জায়গায় মুসলিমদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা। ২. কুরআন-হাদিসের অপপ্রয়োগ করে প্রচলিত বাইবেল অর্থাৎ কথিত তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিলের বিশুদ্ধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া এবং প্রচলিত বাইবেল আল্লাহর কালাম এ ধরণের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করা। ৩. ঈসা আ. সম্পর্কিত কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস ব্যবহার করে মুসলমানদের সামনে ঈসা আ. এর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। ৪. মুসলমানদের এলাকায় ভালো ভালো স্কুল প্রতিষ্ঠা করে বিনামূল্যে মুসলিম শিশুদের সেখানে পড়ানো। শিক্ষার নামে তাদের মগজ ধোলাই করা এবং খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত করা। ৫. বিভিন্ন মিশনারী হাসপাতাল ও এন. জি. ও. এর মাধ্যমে মুসলমানদেরকে সেবা ও ধর্মের ফাঁদে ফেলা আর খৃষ্টধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা। খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করলে বড় অংকের অর্থ এবং সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দেয়া। ৬. সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় এই যে, মিশনারীরা নিজেরা আলেম-মুফতী বানাচ্ছে এবং ছড়িয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে। মোট কথা, তারা শুধু ধর্মান্তরিত নয় পারিবারিক ব্যবস্থা এবং দাম্পত্য সম্পর্কও নষ্ট করছে। লক্ষ লক্ষ পুরুষ বেকার থাকতে নারী উন্নয়নের নামে এন. জি. ও. গুলো টাকার লোভ দেখিয়ে আমাদের মা-বোনদের রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছে, খোলামেলা হয়ে চলতে উৎসাহিত করছে। সমাজে সৃষ্টি করছে বিশৃঙ্খলা।
আজকের শিশুরা হচ্ছে আগামীর ভবিষ্যৎ। মুসলিম জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য তারা আজ এই নিষ্প্রাণ শিশুদেরকে টার্গেট করেছে। শিশুদেরকে ইসলামবিদ্বেষী ও খৃষ্টধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য জায়গায় জায়গায় রুচিসম্মত মিশনারী স্কুল তৈরি করছে। শিক্ষার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে খৃষ্টবাদের বীজ! শিক্ষার নামে তারা এই ন্যাক্কারজনক লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কী পরিমাণে নির্লজ্জ হতে পারে...। এক দায়ী ভাই পঞ্চগড় সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে এক মিশনারী স্কুল সম্পর্কে এক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন। স্কুলের অফিসরুমে যিশুর মূর্তি রাখা থাকে। প্রত্যেক রুমের সামনে আছে ক্রুশ আর ভিতরে যিশু, মারিয়ামের ছবি।পাঠ্যতালিকায় ইসলাম শিক্ষা বই রাখা হয়না, বরং খৃষ্টানদের নিজস্ব বই শিক্ষা দেয়া হয়। যার উপরে অঙ্কিত, মেরি তাঁর বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে আছে। মুসলিম শিশুদের স্কুলের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা হয়, তেমনি অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রেও। কোনো ছাত্র মেধাবী হলে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত মিশন তার লেখাপড়ার খরচ বহন করে। এমনকি তাদেরকে নিজেদের দেশেও নিয়ে যায়। প্রতি রবিবার মুসলিম বাচ্চাদেরকে তাদের সাথে ইবাদত করতে হয়। সেখানে বাইবেল পাঠ করা হয় সাথে, সাথে ছবি আঁকা-আঁকি ও নাচ-গান শিখানো হয়। শুক্র ও শনিবার দৈনিক স্কুলেই তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। খাওয়ার আগে বিশেষ কক্ষে তাদের বিশেষ ধরণের প্রার্থনা করানো হয়। সব বাচ্চারা মাথার উপর হাত তুলে ক্রশচিহ্ন বানায় আর বলে, ‘হে প্রভু যিশু! তুমি তো আমাকে খেতে দিয়েছো। যারা পায়নি তাদেরকেও তুমি খেতে দাও। আমাদেরকে যিশুর নামে চাই! অর্থাৎ তারা নিজেদেরকে যিশুর নামে উৎসর্গ করে।
কোথায় ক্ষমতাধর চিন্তাবিদ মুসলমানেরা? হায়েনার দলেরা আমাদের সহজ সরল মুসলিমদের সাথে কি করছে! এতকিছুর পর একজন শিশুর খ্রিস্টান হওয়ার আর কি বাকি থাকে। জাতির মেধাবী সন্তানদের গড়ে তুলছেইসলামবিদ্বেষী খ্রিস্টানরূপে। এত কিছু ঘটে যাচ্ছে আমাদের আশেপাশে অথচ আমরা হাত-পা গুঁটিয়ে বসে আছি! তা কিভাবে সম্ভব? আমরা উপজাতি জনগোষ্ঠীকে নিজেদের মত মানুষ মনে করি না। তাই হয়তো তাদেরকে খ্রিস্টান বানানোর প্রক্রিয়া নিরবে দেখে আসছি। কিন্তু যখন আগুন নিজের ঘরে এসে লেগেছে তখনও কি আমাদের হুঁশ হবে না? বর্তমান প্রেক্ষাপট হিসেবে আমাদের কিছুগুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
সবার আগে আলেম সমাজকে একতাবদ্ধ হতে হবে। কেননা ক্ষমতাধর ইহুদী-নাসারারা একতাবদ্ধ হওয়ায় এসব তারা সম্ভব করেছে। মিশনারীরা প্রধানত দরিদ্র মুসলমানদের বিনামূল্যে সেবা-সহায়তা এবং অর্থ চাকরির লোভ দেখিয়ে খ্রিস্টান বানায়। এক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য হলো তাদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। অভাবের তাড়নায় আর কোনো মুসলিমকে যেন তাদের খপ্পরে পড়ে ঈমান হারাতে না হয়। মিশনারি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে দাওয়াত ও তাবলীগ চালু করতে হবে, যেকোনো মূল্যেই হোক না কেন! মানুষের দুর্বল ঈমান ও ইসলাম হওয়া খ্রিস্টানদের সুযোগ করে দেয় তাই তাদের দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। মিশনারী ও এন. জি. ও. দের ধর্মান্তর করার কলাকৌশল সম্পর্কে বই পুস্তক ও হ্যান্ডবিল বিলি করে মানুষের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা। প্রতিটা মিশনারী স্কুলের পাশে মানসম্মত নূরাণী কিন্টারগার্ডেন প্রতিষ্ঠা করা এবং এলাকাবাসীকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সতর্ক করা, যাতে কেউ তাদের বাচ্চাদের মিশনারী স্কুলে না পাঠায়। তাদের বাচ্চাদেরকে যেন তারা হাফেজ, আলেম তথা ‘দায়ী আলেম’ বানায়।
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কুরবানি হয়তো ভুলে গিয়েছি। তাঁরা কত কষ্ট মুজাহাদা করেছেন তবুও ইসলামি ঝান্ডাকে একবারও নিচে নামতে দেননি। আমাদের সচেতন হতে হবে এর পাশাপাশি তাদের কুচক্র থেকে বাঁচতে হবে এবং এর তৌফিক আল্লাহর কাছ থেকে চাইতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন