মহানবি হযরত মুহাম্মাদ স. এর আগমনের পূর্বের যুগকে বলা হয় আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকারের যুগ। এই যুগটি ছিল রসূল স. এর আগমনের অন্যতম বড়ো কারণ। সেই যুগে ছিল না কোনো ইনসাফপূর্ণ শাসনব্যবস্থা। মানবসমাজ নিমজ্জিত ছিল চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, মদপান, জুয়ার মত ভয়াবহ কাজে। বিশেষ করে নারীরা ছিল অবহেলার চরমে, অবজ্ঞা বশত তাদের সাথে পশুর ন্যায় আচরণে তারা থাকত সদা তৎপর। মানবসত্তার ‘হাক্বীকত মাহীয়্যাত’-র বিন্দুমাত্রও তাদের মাঝে অবশিষ্ট ছিল না। নারী জাতি তাদের কাছে ছিল বিষাক্ত সাপের ন্যায়।
এভাবে যুগের পর যুগ ধরে যে সকল জাতি পৃথিবীতে বসবাস করেছে তাদের প্রত্যেকেই নারীদের জন্য নির্যাতনের নিত্যনতুন পন্থা উদ্ভাবন করত। বিশেষ করে পাশ্চাত্য সভ্যতা নারীদের প্রতি যে জুলুম চালিয়েছে, তার নজির সভ্যতার ইতিহাসে অনুপস্থিত। তবে বিষয়টি এই দৃষ্টিকোণ থেকে আরও বেশি পীড়াদায়ক যে, এই তথাকথিত সভ্যতায় বেড়ে ওঠা এ সকল নারীরাও এই সংস্কৃতিকে সগৌরবে মেনে নিচ্ছে। গর্ব ভরে এই কথা বলে বেড়াচ্ছে, আমাদের সাথে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করা হচ্ছে। আমাদের সমান অধিকার মূল্যায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব সত্য এটাই যে, পাশ্চাত্য সভ্যতা নারীকে সম্মানজনক অবস্থান থেকে দূরে সরিয়ে জীবনযাপনের এক দুর্বিষহ রীতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। তাদের বানানো হয়েছে ভোগ্য বস্তু। নিম্নমানের সব কাজ তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আফসোস! আমাদের দেশের মুসলিম নারীরাও পাশ্চাত্য সভ্যতায় প্রভাবিত হয়ে যন্ত্রণা এবং অপমানকেই নিজেদের জন্য সম্মানের বিষয় মনে করছে। এই সভ্যতাকে নিজেদের জন্য কল্যাণের কারণ মনে করছে। ইসলামকে তারা ধর্ম মনে করছে। অথচ তাদের এই কথা মনেই হচ্ছে না যে, তারা কুরআন-সুন্নাহর বিরোধিতা করছে।
কুরআনের সুস্পষ্ট বিবৃতি রয়েছে- (ان اكرمكم عند الله اتقاكم) অর্থ: এর মধ্যে অধিক পরহেজগার ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত। এ আয়াত এটাই প্রমাণ করে যে, মূল্যায়ন করা, সম্মান করা, প্রশংসার যোগ্য হওয়া, এগুলোর প্রত্যেকটি তাকওয়ার সাথে সম্পর্কিত। এমনকি একজন পুরুষ যেমন তাকওয়া ও আমলে সালিহের মাধ্যমে অধিক প্রিয় হতে পারে; ঠিক তেমনি একজন নারীও এই কাজগুলোর দ্বারা আল্লাহ ও মানুষের কাছে প্রিয় পাত্রী হতে পারে। এই ক্ষেত্রে কারও প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম করা হয় না এবং কারও নেক আমলকে বিনষ্ট করা হয় না। যেমনটি কুরআনে এসেছে–
(لا تديع عمل عامل منكم من ذكر او انثى)
অন্যত্র হাদীসে এসেছে, আয়িশা রা. রসূল স. থেকে বর্ণনা করেন: (الرجال شقائق النساء ان ( অর্থ: নিশ্চয় নারী জাতি পুরুষ জাতির মতই। (আবু দাউদ)।
অর্থাৎ সম্মান-মর্যাদা, ন্যায়পরায়ণতা, নিরাপত্তার দিক থেকে নারী জাতি পুরুষ জাতির মতই। তবে বিধানগতভাবে যে-ই পার্থক্য করা হয়ে থাকে তা মহান আল্লাহ তা’আলার হেকমত থেকে খালি নয়। বরং এই পার্থক্য তাদের কল্যাণের জন্যই করা হয়েছে। তাদের মান-মর্যাদা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে করা হয়েছে। অপর হাদিসে আছে, এক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের একজনের তার স্ত্রীর ওপর কতটুকু হক্ব রয়েছে? রসূল স. বললেন, যখন তুমি খাবে তাকেও খাওয়াবে, যখন তুমি পরিধান করবে তাকেও পরিধান করাবে, তার চেহারায় আঘাত করবে না, মন্দ বলবে না, শাস্তি মূলকভাবে তাকে ঘর থেকে বের করে দেবে না। এই হাদিসে একজন নারীর যে সকল কারণে অপমানিত, লাঞ্ছিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেগুলোকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এভাবে রসূল স. তাদের প্রতিটি ক্ষেত্র তুলে ধরে মানুষদের সতর্ক করেছেন যে, তোমরা তাদের উপর বিন্দুমাত্র জুলুম করবে না।
তাই প্রিয় পাঠক! আসুন ইসলাম সম্পর্কে যারা অজ্ঞ আমরা তাদের সামনে ইসলাম ও শরিয়তের সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরি এবং সঠিকতা বোঝানোর চেষ্টা করি। এবং তথাকথিত সভ্যতার বিষাক্ত ছোবল থেকে নারীদের রক্ষা করি। আল্লাহ তৌফিক দান করেন। আমিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন