দাদার মৃত্যু; শতবর্ষী জীবনের অন্তর্ধান
দাদা ইন্তেকাল করেছেন গত সন্ধ্যায়। সূর্য যেমন নিস্তেজ হতে হতে সহসাই ডুবে যায়, দাদার জীবনের সলতেটাও জ্বলতে জ্বলতে সহসাই নিভে গেছে দিনের আলোর সঙ্গে সঙ্গে। অবশ্য দাদা ইন্তেকাল করেছেন আরও দেড় মাস আগে। চোখ দুটো, হাত-পা, গোটা দেহ-সবই নিথর, নিশ্চল। বেঁচে ছিল শুধু নিঃশ্বাসটুকু। এই নিঃশ্বাসের সঙ্গেই ঝুলে ছিল দাদার জীবন।
কী আশ্চর্য! আমরা আমাদের দেহের কত যত্ন নেই। পরিচর্যা করি। দাদাও করেছেন। বরং আরো বেশি করেছনে। নিজের জওয়ানির ব্যাপারে তিনি ছিলেন বেশ সচেতন। চোখে সুরমা পরতেন। হাতে থাকত সবসময় থাকত দামী ঘড়ি। অথচ এই হাত-পা-চোখ মরে যাওয়ার পরেও বেঁচে ছিলেন দাদা, শুধু একটু নিঃশ্বাসের জোরে। তাহলে কি এই নিঃশ্বাসই আমাদের জীবন, যার কোনো যত্ন নিতে হয় না! পরিচর্যা করতে হয় না! অর্থাৎ জীবনের জন্য আমাদের কোনো খরচ নেই! আমরা জার্নি করি শুধুই জীবনের বহিরাবরণের জন্য-যা মরে গেলেও আমরা বেঁচে থাকি মুফতে পাওয়া নিঃশ্বাসের জোরে!
দাদার মৃত্যু হয়েছে ছায়াসুনিবিড় গ্রামে। যেখানে খেলাঘরের খেলা শেষে বিশ্রামের জন্য অন্তত এক পশলা মাটির ছোঁয়া পাওয়া যায়, মৃত্যু বরিত হয় কোন ধারিত জায়গায় দাদার ভাগ্য সত্যিই ভালো যে, উনার মৃত্য অন্তত এই কংক্রিটের ঢাকায় হয়নি, যেখানে খেলাঘরের খেলা শেষে বিশ্রামের জন্য এক পশলা মাটির ছোঁয়া পাওয়া যায় না। মৃত্যু বরিত হয় অবধারিত জায়গায়। তবু দোয়া করতে মন চায়, আল্লাহ এই ঢাকার আবহাওয়ায় দুশমনকেও মৃত্যু না দিন। ঢাকা যেমন জীবন যাপনের উপযুক্ত শহর নয়, তেমনই মৃত্যুবরণেরও উপযুক্ত শহর নয়। এই শহর শুধুই অমানবিকতার শহর। আমি এই শহরে মৃত্যুবরণ করলে ওপার জীবনে হয়ত অপরাধবোধে ভুগবো!
আমার দাদার জীবন ছিলো শতবর্ষী। আমার ভাগ্য যে আমি একটি শতবর্ষী জীবনের অবসান দেখেছি, আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে; হ্যাঁ...! আমি এমনই মনে করি, যদিও আমি স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে পারিনি, কিন্তু আমি স্ব-হৃদয়ে জরুর উপস্থিত ছিলাম।
আগে কোনো মৃত্যুর ঘটনায় আমার মনে করার মতো কেও ছিলনা; কিন্তু এখন হয়তো কাওকে মনে করতে পারবো; “ইসালে সাওয়াব” টুকু হয়তো গিয়ে হাজিরা দিবে দাদার মাকবারায়। আল্লাহ দাদাকে জান্নাত দান করুন।
কোন মন্তব্য নেই