ঊষর মাদিনার উত্তপ্ত দ্বিপ্রহর। মাথার ওপর সূর্যটা আগুনের ফুলকে ঝরাচ্ছে। মরুভূমির বালিগুলো যেন উত্তপ্ত তামা। পথে-ঘাটে জনপ্রাণের ছায়াটুকু নেই। এমন সময়ে নবীজি সা. বসে আছেন কয়েকজন সাহাবীকে নিয়ে। দূর থেকে একটি ছোট্ট কাফেলা দেখা গেল।
এমন কাঠফাঁটা রোদ্দুরে কারা আসছে? ধীরে ধীরে কাফেলাটি তাদের কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছল। নবীজির মজলিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা। অবস্থা খুবই জীর্ণশীর্ণ। চোখগুলো মনে হচ্ছে কোটরে ঢুকে যাচ্ছে। ঠোঁটজোড়া শুকিয়ে কাঠ। শরীরে ঢাকার মতো সামান্য কাপড় মাত্র। ক্ষুদায় পেটের চামড়া অপরদিকের চামড়ার সাথে আলিঙ্গন করতে চায় যেন। নগ্ন পায়ে দাঁড়িয়ে আছে উত্তপ্ত বালুকারাশিতে। কিছু পাওয়ার আশায়। মায়ামুখো চেহারা আর আদ্রপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে নির্মিশেষ তাকিয়ে আছে রহমাতুল্লিল আলামীনের দিকে।
নবীজি সা. এর চোখ পড়ল এ কাফেলার ওপর। হঠাৎ নবীজির চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে গেল। যেন সদ্য উদিত সূর্য একখন্ড মেঘের পিছনে আড়াল হয়ে গেছে। পেরেশান হয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। ঘরে প্রবেশ করে তৎক্ষণাৎ আর বেরিয়ে আসলেন। আবারো প্রবেশ করে বের হলেন। অস্থিরচিত্তে কয়েকবার এমন করলেন তিনি।
মুসলমানদের একটি কাফেলার দারিদ্রতা নবীজিকে অত্যন্ত বিচলিত করে তুলেছে। ইতিমধ্যে যোহরের সময় হয়ে গেল। বেলালের ওপর আযান দেওয়ার নির্দেশ আসল। তাঁর মধুর কন্ঠের আযানের সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ল ইথারে-পাথারে। যোহরের নামাজ আদায় শেষ। সকলে বসে আছেন। পিনপতন নিরবতা ছেয়ে গেছে পুরো মজলিসে। সবার দৃষ্টি একদিকে নিবদ্ধ। সবাই কারো কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে।
আস্তে আস্তে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মোবারকময় দুটি ঠোঁট নড়ে উঠল। তিনি উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্য করে তাকওয়া সম্পর্কিত দুটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। অতঃপর বললেন, ‘হে লোকসকল তোমরা তোমাদের ধন সম্পদ থেকে দান করো এবং যদি এক টুকরো খেজুর দান করা সম্ভব হয় তাহলে সেটাই দান কর’। তখন এক আনসারী সাহাবীকে একটি বড় থলে আনতে দেখা গেল। যার ভার এ পরিমাণ ছিল, যেটা বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তখন ওই সাহাবীর দেখাদেখি অন্যরাও দান করতে শুরু করল।
একপর্যায়ে এসে দান বিশাল স্তুপে পরিণত হল। সাহাবায়ে কেরাম নবীজির পবিত্র মুখাবয়বে খুশির ঝিলিক দেখতে পেলেন। পূর্ণিমার অত্যুজ্জ্বল চাঁদ যেন।
তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোবারক কন্ঠে উচ্চারিত হল, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো উত্তম কাজ চালু করবে সে আমলকারীদের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ চালু করবে তার ওপর সে মন্দ কাজকারীদের সমপরিমাণ বদআমলের ভার চাপিয়ে দেওয়া হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন