যে বই আলো বিলায়
বিশ্বনবী। হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যিনি হাজার বছর পূর্বে আবির্ভূত হন মরুশহর মক্কা নগরীতে। যার আগমনে সে যুগের মানুষ অন্ধকার থেকে আলোর দেখা পায়। ফিরে পায় নুতন জীবন। জাহেলী যুগের বেহায়াপনা, নিষ্ঠুরতা, ছেড়ে মানুষ আশ্রয় নেয় ইসলামের সুশীতল ছায়ায়। পরিণত হয় সোনার মানুষে। অমর হয়ে থাকে ইতিহাসের পাতায়। সেই মহাপুরুষ তাঁর সদাচার, কল্যাণমুখী চরিত্র, পথহারা মানুষদের তরে উৎসর্গিত প্রাণ দিয়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের হৃদয়াকাশ জয় করে নিয়েছিলেন। ফলত চিরায়ত সৌন্দর্যের মহা প্রতীক তাঁর জীবনী নিয়ে মুসলিম ছাড়াও ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এবং ভিন্ন মতাদর্শের অনেকেই লিখেছেন। পৃথিবীর শুদ্ধতম মরুকুল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র নিয়ে লিখতে গিয়ে তারা বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ করেননি। এক্ষেত্রে সমুজ্জ্বল উদাহরণ হল শিখ সাংবাদিক গুরুদত্ত সিং লিখিত প্রসিদ্ধ বই ‘রাসূলে আরাবী’ (তোমাকে ভালোবাসি হে নবী)। ভিন্ন ধর্মের যারাই মহানবীকে নিয়ে লিখেছেন, প্রায় সবার লেখার মধ্যেই হৃদয় ও মননের আবেগানুভূতি এবং এই মহামানবের সত্য সুন্দর জীবনের উপলব্ধিজাত সারনির্যাস। যার কারনে পৃথিবীর সব ভাষাতেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে যে পরিমাণ বই পাওয়া যায় তার সিকিভাগও অন্য কোনো মনীষী সম্বন্ধে পাওয়া যায় না। ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে গুটিকয়েক যা লেখা হয়েছে তা এখানে মুখ্য নয়। কারণ জাগতিক-ঊর্ধ্বজগতিক কোনো কিছুই ইনসানের সমালোচনা থেকে রেহাই পায়নি।
হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে বাংলা ভাষাভাষীরাও লিখেছেন। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলা ভাষা। বাংলাতে রাসুল সম্পর্কে অনেক বই পুস্তক রচিত হয়েছে। যার মধ্যে একটি কালজয়ী জীবনী হলো, কবি ও সাহিত্যিক গোলাম মোস্তফা লিখিত ‘বিশ্বনবী’। শব্দের সৌরভ, বাক্যের কুশলতা; সর্বোপরি ছন্দময় সাহিত্যের প্রকাশে বইটি পেয়েছে বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। লেখক সাধুভাষায় তার সমস্ত আবেগ ও ভক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এই অমর গ্রন্থ। নবী-জীবনের বিভিন্ন দিক ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়েও দিয়েছেন বৈজ্ঞানিক স্বতন্ত্র বর্ণনা। ফলত বইটি দুই খন্ডে বিভক্ত। প্রথম খন্ডে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী। দ্বিতীয় খন্ডে যুক্তি ও বিজ্ঞানের আলোকে হৃদয়গ্রাহী বিশ্লেষণ।
‘বিশ্বনবী’ বাংলা ভাষায় রচিত এক অভূতপূর্বক কালজয়ী গ্রন্থ। বাংলা সাহিত্য দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যপূর্ণ ভাষায় সিরাত রচনায় যে অভাববোধ তার কিছুটা হলেও পূরণ করেছে এই বই।
‘বিশ্বনবী’ বাংলা সাহিত্যের এক অপূর্ব সংযোজন। যুগ যুগ ধরে ‘বিশ্বনবী’ সিরাতপ্রেমীদের নিকট অমর হয়ে থাকবে।
কোন মন্তব্য নেই