বেলা ফুরিয়ে এক অবেলার মাঝে, ভ্রান্তির ক্লান্তিতে পিপাসিতের ন্যায় উম্মাহ কাঁদে। মাজলুমের চিৎকারে ভূপৃষ্ট কেঁপে ওঠে। প্রশ্ন করে যমিন, জালিমের অবসান কবে হবে?
আজ যদি তুমি মুসাফির বেশে আটশো কোটি মানুষের মাঝে তাকাও, শুধু মুসলিম উম্মাহরই চিৎকার শুনতে পাবে। এক সময় মুসলমানদের ছিল খিলাফত, পৃথিবীতে বিরাজ করছিল এর শান-শওকত। ছিল কুরতুবা, গায়ানাতা, আলহামরা; ছিল তুরস্ক, তুর্কিস্তান; ছিলেন বিজয়ের মহানায়ক ইমামুদ্দিন জিংকি, ক্রুসেডবিরোধী জিহাদের সিপাহসালার নুরুদ্দিন জিংকি, বায়তুল মাকদিস বিজেতা সালাউদ্দিন আইয়ূবী, কনস্টান্টিনোপল জয়ের মহাবীর মুহাম্মদ আল ফাতেহ। আমাদের ছিল তারিক বিন যিয়াদের তাকবির ধ্বনি, বিন কাসিমের হুংকার, গজনবীর তরবারির ঝংকার। ছিল বুখারা, সমরখন্দ, তাশখন্দ; তিরমিযী, ইবনে আরাবী, ছিল ইবনে জোবায়ের, ইবনে রুশদ, আবু হাইয়ান আন্দালুসী, আরো কত জ্ঞানী-গুণী।
কোথায় গেল তাঁরা? কোথায় হারালো খিলাফতের ধারা? লজ্জায় লাজুক আজ, কিভাবে হলো এ কাজ? মুসলমানরা আজ হতাশায় মুহ্যমান। হ্যাঁ, উম্মাহ আজ হতাশাগ্রস্থ, ক্লান্ত, ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত, নিষ্পেষিত, চোখ খুললেই দেখা যায় মা-বোনেরা হচ্ছে নির্যাতিত; স্বামীহারা স্ত্রীর ঘুমহীন রাত, শোনা যায় সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ। কানে আসে ছেলেহারা বাবার ক্রন্দন, জালিমের জুলুমে কেঁপে ওঠা মজলুমের হৃদয়স্পন্দন। আমরা শুধু দর্শকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি সারাক্ষণ! এটাই কি ছিল আমাদের কাম্য? এটাই কি ছিল আমাদের জন্য যথার্থ?
বলো, বলো, রব্বে কারিমের কসম করে বলো!
১৯২৪ সালে খিলাফত হারিয়েও আমরা ছিলাম নীরব দর্শক। আজ খেলাফত বিলুপ্তির একশো বছর পূর্ণ হতে চলল। অথচ বুঝেও বোঝা হলো না; কে আমাদের শত্রু, কারা আমাদের মিত্র! জানা হলো না আমাদের করনীয়-বর্জনীয়, চেনা হলো না কে জালিম কে মাজলুম! পারলাম না জালিমের অবসান ঘটাতে ও মাজলুমের পাশে দাঁড়াতে! পারলাম না বলতে মাজলুমকে, ‘ভয় করো না, আমরা আছি তোমাদের সাথে’। চিনলাম না তাদেরকে, যারা আজও জিহাদের পথে নির্জন রাতে পাহাড়ের চূড়ায় রাত্রি যাপন করে প্রভুর ঐ হুকুম পালনার্থে, যা তিনি বলেছেন পবিত্র কোরআনে, “তোমাদের কী হলো যে, তোমরা যুদ্ধ করো না আল্লাহর পথে, এবং অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য; যারা বলে, হে আমার রব! আমাদের এই জনপথ থেকে বের করে নিয়ে যান যার অধিবাসীরা অত্যাচারী”। (নিসা: ৭৫)
কেন পারলাম না তাদেরকে চিনতে? কেন পারলাম না নিজেকে চিনতে? কেন পারলাম না নিজে বুঝতে, অপরকে বোঝাতে?বলো,বলো, হে প্রিয়! রব্বে কারিমের কসম করে বলো!
খেলাফত হারানোর একশো বছর পার না হতেই আজ উম্মাহর মাঝে হাজারো ফিতনার আবির্ভাব ঘটেছে। তরুণ সমাজের মাঝে বেড়ে চলছে ইসলাম নিয়ে নানা সংশয়। ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে চেচনিয়া, বসনিয়া, মালি, সোমালিয়া, তিব্বত, উইঘুর, কাশ্মীর ও আরাকানের মুসলমানদের আর্তনাদ। তরুণ প্রজন্ম বলতে শুরু করেছে রব্বে কারিম কি শুনে না তাদের ডাক? কালের পরিক্রমায় উম্মাহ আজ ভুলে গেছে আল্লাহর সেই আশ্বাস বাণী। আল্লাহ বলে দিয়েছেন, “আমি ও আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হব, নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী”। (মুজাদালাহ: ২১)
আজ আমরা বিজয়ের স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নে বিজয়ের মালা গাঁথি। কিন্তু কখনো কি পেরেছি সেই শর্ত পূরণ করতে যা তিনি পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, “হে ইমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের কদম দৃঢ় করে দিবেন”। (মুহাম্মদ: ৭)
আমরা কি পেরেছি আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করতে? আমরা কি পেরেছি তার দ্বীনকে পূর্ণ রূপে মানতে যেমনটি তিনি বলেছেন, “হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণ রুপে ইসলামে প্রবেশ করো”। (বাক্বারা: ২০৮)
আমরা কি পেরেছি সেই পথে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে? পেরেছি কি নিজের জান ও মাল সেই পথে উৎসর্গ করতে? যে পথ সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে ভালোবাসেন যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে সারিবদ্ধ হয়ে, যেন তারা সিসাঢালা প্রাচীর। (সফ: ৪)
প্রিয় পাঠক! প্রতিকূলতার এই ক্লান্তিতে, কখনো যেন ভুলে না যাই আল্লাহর সেই আশ্বাস বাণী, “তোমরা হীনবল হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী থাকবে, যদি তোমরা ঈমানদার হও”। (আলে ইমরান: ১৩৯)
হ্যাঁ, আল্লাহর দ্বীন সত্য, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, হাজারো প্রতিকূলতার মাঝেও আজ উম্মাহর মুসলিম যুবকরা জাগ্রত হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি তা’আলা তাদেরকে বিজয় দান করেছেন। সোমালিয়ার মাটিতে আজও উম্মাহর সন্তানেরা অবিচল রয়েছেন আল্লাহর পথে। কাশ্মীরের মাটিতে যুগ যুগ ধরে উম্মাহর সন্তানরা জিহাদের পথে শত্রুদের সাথে লড়াইরত আছেন।
তাই প্রিয় ভাই! বিচলিত, হতাশাগ্রস্থ, ক্লান্ত হওয়ার সময় আর এখন নেই। এখন সময় ঘুড়ে দাঁড়ানোর। ধুম্র কুহেলিকার জাল দূর করে, শত বাঁধার প্রাচীর ডিঙিয়ে এখন আমাদের ছুটে যেতে হবে মাজলুমদের তরে। আবারও মুসলিম বোনের আব্রুর হেফাজতের জন্য মুহাম্মদ বিন কাসিমের ন্যায় ছুটে যেতে হবে দূরে অথবা বহুদূরে।
কবির ভাষায়—
অন্ধকারে তারা নিভিয়েছে বাতিনির্জনে তারা দিয়েছে ফাঁকি,
আড়াল থেকে করছে আহ্বান
কালিমার পতাকা হাতে নাও হে নওজোয়ান!
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে কবুল করুন। বুকে দরদ নিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নাঙ্গা তরবারী হাতে আবারও জিহাদের ময়দানে ছুটে যাওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন