গভীর রাত্রি। ঘন অন্ধকারে পুরো গ্রাম ছেড়ে গেছে। মৃত্তিকাময় স্তূপরাশি বন্ধুর গিরিপথ। সবকিছুই নিবিড় কালিমায় আবৃত। পথ নির্জন, চারিদিক নিস্তব্ধ। সারাতল্লাট নিদ্রার সুখ-ক্রোড়ে শায়িত। পথে পথে দেহ-শীতল বাতাসে আন্দোলিত তরুচ্ছায়া। শুধু লতা-পাতার মর্মর ধ্বনি আর দূরে বহুদূরে নিশাচর পক্ষী ও জন্তুর কলরব। মাথার ওপর তারকাখচিত আকাশে নীলাভ উজ্জ্বল মেঘ। রাত্রির বিশ্রামের এ যেন এক অপূর্ব রূপ। কিছুক্ষণ পূর্বে মসজিদের সুউচ্চ মিনার থেকে ভেসে এসেছে মুয়াজ্জিনের পবিত্র কন্ঠে ফজরের আজান।
কুয়াশামাখা গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে চলছে ছয়জনের ছোট্ট এক কাফেলা। যাদের মুখে রয়েছে যিকির আর অন্তরে রয়েছে ফিকির। সকলের উদ্দেশ্যে একটিই, কিভাবে দিশেহারা মানুষ খুঁজে পায় সঠিক পথের দিশা।
তারা হেঁটে যাচ্ছে সম্মুখপানে। পথের দু’ধারে যেখানেই কোনো বসত-বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে সেখানে মনে করিয়ে দিচ্ছে মহান রবের দরবারে হাজিরা দেবার কথা। জানিয়ে দিচ্ছে ‘নামাজ ঘুম থেকে উত্তম’।
ক্রমশ বেড়েই চলছে কাফেলায় লোকের সংখ্যা। এরাই যেন হযরত ইলিয়াস কান্ধলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর যথাযোগ্য উত্তরসূরী; যাদের দিলের তামান্না অভিন্ন, তাওহিদে এলাহী যাদের বিশ্বাস, মিল্লাতী ইব্রাহীম যাদের পরিচয়, উম্মতে মুহাম্মদী যাদের জাতীয়তা।
শেষ অবধি কাফেলার লোকসংখ্যা ত্রিশ জনে পৌঁছে। তারা ধীর পায়ে অগ্রসর হয় মসজিদ পানে। কতবার এভাবে হেঁটেছে তবুও এটাই যেন নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন উদ্যমতা। মসজিদের প্রান্ত সীমানায় পা রেখে স্রষ্টার দরবারে ইস্তেগফার করে যথার্থ দায়িত্ব পালনে অপারগতার কারণে। তারপর....! মসজিদে প্রবেশ আর অনুভবে এক অপূর্ব শিহরণ।
এরাই হলো কুরআনুল কারীমের ওই আয়াতের দৃষ্টান্ত, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ পাক স্বয়ং ঘোষণা দিয়েছেন, “ওই ব্যক্তির চেয়ে উত্তম আর কোন ব্যক্তি হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে আর নিজে উত্তম আমল করে আর সর্বশেষ সে বলে আমি মুসলমানের মধ্যে একজন।” (সূরা হা-মীম সেজদা - আয়াত ৩২) যে ব্যক্তি ফজর আদায় করল তার চেহারা থাকবে সমুজ্জল। অযুর পানির চেয়ে উত্তম প্রসাধনী আর কী হতে পারে যা মুছে দেয় অতীতের সব কালো দাগ। অতীতের দাগ মুছে ফেলার মাধ্যম তো মাত্র দু’টাই, হয়তো নয়নের পানি, নয়তো অজুর পানি।
এভাবেই দাওয়াতের মেহনত পৃথিবীর প্রতিটি কোণে দ্যুতি ছড়াচ্ছে। হাজারো আল্লাহ ভোলা, পথ হারা মানুষ খুঁজে পাচ্ছে সঠিক পথের দিশা। লুফে নিচ্ছে রব্বে কারীমের অপার রহমতের বারিধারা। অশ্রুর জলে পাপ-পঙ্কিলতা বিদূরিত করে আশ্রয় নিচ্ছে মহান রবের কুদরতি আঁচলে।
ফের অপেক্ষা যদি হয় প্রিয়তমের জন্য, হোক না একটু বিলম্ব — তাতে কী? তারপর যখন প্রিয়তমের সান্নিধ্য লাভ হয় তখন.....। মুমিনের এক নামাজ থেকে পরবর্তী নামাজ যেন সেই অপেক্ষার অনুপম দৃষ্টান্ত। জীবনভর এ স্বপ্নই তো বনে গেছেন যুগে-যুগে শত-শত মনিষী। আবার চাওয়া থেকে পাওয়াই যদি হয় বেশি, তবে তো কথাই নেই।
শুরু হলো নামাজের পর্ব। ইমাম সাহেবের সুমধুর কন্ঠে ‘সুরা সেজদা’ এর তেলাওয়াতে মুহূর্তেই উঠে গেল তন্দ্রার ক্লান্তি। নিদ্রা পরিণত হলো অশ্রুজলে। অলসতা রূপ নিল উদ্যমতায়।
কত নামাজই তো আদায় করা হলো, তবুও কেন আজ মনে হচ্ছে এটাই জীবনের প্রথম নামাজ!!শান্তি কোথায়? আর তুমি আমরা হন্য হয়ে খুঁজছি কোথায়?
নামাজ শেষে আমীর সাহেবের যবান থেকে শোনা হলো আহাম বয়ান। ওই মজলিসের গ্রামবাসী ‘চব্বিশ ঘন্টা মসজিদ আবাদী’ মেহনতের প্রতিশ্রুতি দিল। সর্বশেষে রাব্বি কারিমের কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে তারা অনুপ্রবেশ করল এক সুন্দর প্রভাতে। আর প্রত্যাশা রইল এমন হাজারটা প্রভাতের...
চমৎকার মাশাআল্লাহ 🩶
উত্তরমুছুনমা শা আল্লাহ, আপনার লেখার হাত ঝরঝরে। শুরু থেকেই মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। লিখনীর ক্ষেত্রে এটা ভালো গুণ।
উত্তরমুছুনতবে পাঠক হিসেবে দুর্গগুলোর বর্ণনাতে এসে কিছুটা অমনোযোগী হয়েছি। সম্ভবত যেই চঞ্চলতা আর উদ্দীপনা আপনার প্রতিটি যাত্রার শুরুতে তৈরি করেছিলেন—তা বর্ণনা করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছেন। এ ক্ষেত্রে কিছুটা চঞ্চলতা আনা যেতে পারে। যেমন আগ্রহ ভরে কিংবা আশ্চর্য হয়ে প্রাচীরের উচ্চতা দেখা, গোলাবর্ষণের ছিদ্র দেখা ইত্যাদি।
আপনার যাত্রায় কিছু শব্দ আর বাক্যের ব্যবহার দারুণ লেগেছে। সূর্যের কড়া ভাষায় 'গালিগালাজ', টাকা না দিলে দায়িত্বশীলের টিকিট হাতে ধরে বসে থাকা এবং বৃষ্টিতে কেল্লাটা নজরে নিয়ে ফেরার পথ ধরা।
ওভারঅল, আপনার লেখার ধরণ শেষপর্যন্ত পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে, এই কৃতিত্ব শুধুই আপনার। দোয়া রইলো—একজন লেখক থেকে জাদুকরী লেখকে পরিণত হোন 💛
মা শা আল্লাহ 💛
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন