অবশেষে আটটার ট্রেন দশটায় কমলাপুর ছাড়ে। ফুলবাড়ী পৌঁছতে সকাল ছয়টা বেজে যায়। সেখান থেকে যমুনার শাখা নদীর পাশে এক চার্চে যাই। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাই না। তাই নাস্তা করে আরেক জায়গার উদ্দেশে রওনা হয়ে যাই। গ্রামের প্রবেশপথে ‘মহিলা কল্যাণ সংস্থা’ নামে একটা অফিস দেখতে পাই। এটি সরাসরি খ্রিষ্টানদের দ্বারা পরিচালিত। যার মাধ্যমে তারা গ্রামের সরলমনা মহিলাদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ঋণ দেয়, গরু কিনে দেয়, এভাবে একপর্যায়ে তারা মানুষকে খ্রিষ্টান বানিয়ে ফেলে। খ্রিষ্টান হতে বাধ্য করে।
আরেকটু সামনে গিয়ে দেখি এমনই একটা সংস্থার অফিসের ভেতর নতুন অনেকগুলো বাইক রাখা। এগুলো এলাকার যবকদের দিয়ে তাদের সব সময় খুশি রাখে। তারপর গ্রামের আরও ভেতরে গিয়ে একসাথে দুইটা গির্জা পাই। গির্জার পাদ্রী, দায়ীরা প্রতিদিন এখানে আসে না। শুধু রবিবার আসে আর ইবাদত করে চলে যায়। কিছুক্ষণ গানবাজনা করে। তারপর চলে যায়। এলাকার এক মুরুব্বির সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, তারা প্রতি সপ্তাহে একবার ইবাদত করে চলে যায়। এলাকার লোকদের দাওয়াত দেয় না। আর এলাকার লোকেরা এটাকে কিছু মনে করে না। তারা মনে করে সবাই সবার আগের মতই আছে। ভালোই তো আছে।
ভাবার বিষয় হচ্ছে, শহরের জনবসতি রেখে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে গির্জা বানানোর কারণটা কি? হ্যাঁ, কারণ হচ্ছে সহজ সরল মানুষদের সাথে আস্তে আস্তে মিশবে। তাদের ভালো-মন্দ খোঁজখবর রাখবে। তাদের বিপদে সাহায্য করবে। একপর্যায়ে খ্রিষ্টান বানাবে।
গ্রামের এক মাদ্রাসা ছাত্রের সাথে কথা হয়। সে বলে, ‘তারা তাদের মত করে দাওয়াত দেয়। আমরা যেমন তাবলিগে দাওয়াত দিই। তারা তো খারাপ কাজ করছেন না।’ এ হলো ওখানকার একজন মাদ্রাসা ছাত্রের চিন্তা। এখানে তার দোষ নেই। কারণ মানুষের চিন্তাচেতনা নির্মিত হয় তার পরিবেশ বিবেচনায়। ছেলেটা এও বলেছে, ‘তারা এক আল্লাহকে মানে আমরাও এক আল্লাহকে মানি, তারাও ইবাদত করে আমরাও ইবাদত করি।’
ফুলবাড়ী থানায় হয়তো তিনটা বা চারটার বেশি মাদ্রাসা নেই। ফুলবাড়ি তাবলিগের মারকাজ মাদ্রাসা হচ্ছে হেফজ বিভাগ পর্যন্ত। বোঝাই যাচ্ছে, মাদ্রাসা...
ফুলবাড়ীতে আর দেরি করিনি। ফুলবাড়ি হচ্ছে দিনাজপুর জেলার একটি থানা। ফুলবাড়ি থেকে দিনাজপুর প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরত্বে। বাসে করে দিনাজপুর শহরে চলে আসি। এখানে রেললাইনের রাস্তার পাশে দুইটা গির্জা থাকার কথা। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাইনি। ছবির মধ্যে গির্জার ঘরও দেখেছিলাম। কিন্তু এখন কোথায় উধাও হয়ে গেছে। তাই ওই জায়গা থেকে একটু ভেতরে ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে সদর উপজেলা মোড়ের দিকে যাই। উপজেলা কার্যালয় থেকে বিশ গজ আগে রাস্তার বাম পাশে বাউন্ডারি করা বড়ো একটা গির্জা।
আমরা এখনও অটো থেকে নামিনি। দেখি, কিছু ছেলেমেয়েকে অটোতে করে গির্জার ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। দেখে মনে হলো, গ্রাম থেকে তাদের আনা হয়েছে। গেইটে দারোয়ান আছে। তাই গির্জার বিপরীত পাশের রাস্তা ধরে গ্রামের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করি। একটু ভেতরে গিয়ে ছোটো একটা মাঠ পাই। ছোটো বাচ্চারা সেখানে খেলাধুলা করছে। তাদের সাথে একটু কথাবার্তা বলার চেষ্টা করি। আমাদের এক সাথী একজনের সাথে কথা বলেন।
গির্জার ডান পাশের রাস্তা দিয়ে একটু ভেতরে তাদের একটা স্কুল আছে। ‘নাডারা মিশনারি স্কুল’ নামে। স্কুলটা মোটামুটি বড়ো। ছেলেটা ওই স্কুলে পড়াশোনা করে। সে আমাদের জানায়, আজকে রবিবার খ্রিষ্টানদের ইবাদতের দিন। তাই আজকে স্কুল বন্ধ। জিজ্ঞাসা করা হলো, তারা কখন ইবাদত করে? বলল, নির্দিষ্ট সময় নেই। প্রতি সপ্তাহে এটা গির্জা থেকে নির্ধারণ করে দেয়। বললাম, আজকে তাদের ইবাদত কখন? বলল, সকাল সাতটা থেকে দশটায় পর্যন্ত হয়ে গেছে। তখন সময় দুপুর দুইটা। বললাম, কতক্ষণ ইবাদত হয়? বলল, দুই থেকে তিন ঘণ্টা। বললাম, প্রত্যেকের জায়গায় একই সময় ইবাদত হয়? বলল, না। প্রত্যেক গির্জায় রবিবারে তাদের পালক প্রধান (গির্জার প্রধান পাদ্রী) তাদের সময় নির্ধারণ করে দেয়। বললাম, ভেতরে যাওয়ার যাবে? বলল, হ্যাঁ, যাওয়া যাবে। গেইটে একজন বসা থাকে, তাকে বললেই হবে।
তার সাথে কথা বলে গ্রামের আরও ভেতরে গেলাম।
চলবে ইনশাআল্লাহ...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন