আজকে আমাদের মুসলিম বিশ্বের পরিস্থিতি আমাদের চোখের সামনে দিবালোকার মতো পরিষ্কার। একটা সময় গোটা বিশ্বকে মুসলিমগণ শাসন করেছিলেন। আর তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি রোম, পারস্যও মুসলিমগণের কথায় উঠতো বসতো। কিন্তু আজ আমরা কোথায়? ইহুদি-নাসারা কর্তৃক গোটা বিশ্বমানচিত্র থেকে মুসলিমদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে নতুন ভাবে পৃথিবীর ইতিহাস তৈরীর ভয়াবহ চক্রান্তের সকল আয়োজন সম্পন্ন হতে চলেছে। মুসলিম পরাশক্তি আরব বিশ্বসহ শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতার মসনদে নিজেদের দাস পুতুল সরকার বসাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়; অনুন্নত মুসলিম বিশ্বে এন.জি.ও. প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গোটা মিল্লাতে মুসলিমার অস্তিত্ব আজ ভয়াবহ হুমকি ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আসলে এই এন.জি.ও. কারা?
এন.জি.ও (n.g.o) এর পূর্ণরূপ ঘড়হ এড়াবৎহসবহঃ ঙৎমধহরুধঃরড়হ অর্থাৎ বেসরকারি সংস্থা। তো এ শব্দ দ্বারা আমরা বুঝি সকল বেসরকারি সংস্থাগুলোকে। অন্য অর্থে বলা হয়, মুনাফার উদ্দেশ্য ছাড়া শুধু সেবার লক্ষ্যে গঠিত বেসরকারি সংস্থাকে। সমাজ উন্নয়নকরণ, দুর্যোগে সেবা প্রদান, শিশু ও মাতৃসেবা দান তথা সেবামূলক কাজ বেসরকারি ভাবে যে সংস্থাগুলো করে থাকে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ সরকার ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি ভিত্তিতে দেশে-বিদেশি এন.জি.ও গুলোকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। আর তারা অনুমতি পেয়ে শুধু সেবামূলক কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না তথা সুযোগের সদ্ব্যবহার! (বিশেষ করে খ্রিস্টান এন.জি.ও গুলো) তারা সেবার নামে মানুষের কৃষ্টি-কালচার, রীতিনীতি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হানছে। গ্রামবাংলার পারিবারিক সামাজিক ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করছে। এতোটুকুই নয় অর্থনীতি এবং রাজনীতিতেও হস্তক্ষেপ করা শুরু করেছে।
আমাদের এই ভারত উপমহাদেশে খ্রিস্টান মিশনারীদের আগমন ঘটে ১৫১৭ সালের দিকে। তারা তাদের ভিত্তি শক্ত করতে স্বজাতীয় খ্রিস্টান বণিকদের এ দেশে নিয়ে আসে। এরপর তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপমহাদেশীয় মুসলিম, হিন্দুর মাঝে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি সহ বিভিন্ন ধরনের লুটপাট করতে থাকে। এবং মুসলমানদের ওপরে হিং¯্র পশুর ন্যায় আচরণ করতে থাকে। এতেও তাদের মন ভরে না, তারা ওয়ারাসাতে আম্বিয়া তথা উলামায়ে কেরামদের হত্যা করে তাদের লাশ গাছে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। শেরশাহী গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোডের দু’ধারে এমন কোন গাছ ছিল না যাতে তারা উলামায়ে কেরামের লাশ ঝুলায়নি। অবশেষে দীর্ঘদিন দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকার পর একটি বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু নিকৃষ্ট জাতির পাগলামি এখানেও ক্ষান্ত হয়নি, আবার ১৯৬১ ও ১৯৭০ সালে খ্রিস্টান মিশনারীরা বাংলার মুসলিম, হিন্দুদেরকে খৃস্টান বানানোর দুরভিসন্ধি নিয়ে এন.জি.ও দের হাতে হাত মিলিয়ে নিকৃষ্ট কারবার শুরু করে।
১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। পাশাপাশি গোটা দেশ একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। অভাব অনটনের সেই সময় মানুষের দরিদ্রতা ও দুরাবস্থার অজুহাতে চিটার ফন্দিবাজ এন.জি.ও গুলো সেবার উদ্দেশ্যে আগমন করে। এমনিভাবে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়, ১৯৮৮ সালের সর্বনাশা বন্যার সময়, ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের সময় ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় বানের মত অনুপ্রবেশ করতে থাকে এন.জি.ও গুলো। বর্তমানে বাংলাদেশে কার্যরত ত্রিশহাজার বা এর চেয়ে বেশি এন.জি.ও খ্রিস্টানবিশ্ব ও খ্রিস্টান মিশনারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাহায্য সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে। এন.জি.ও সংস্থাগুলো অর্থনৈতিক সাহায্যের নামে অর্থনৈতিক শোষন চালাচ্ছে।
তারা চুরি করছে, তবে পর্দার আড়ালে। ২০% থেকে ৬০% কোনো কোনো সময় সংস্থাগুলো তো একেবারে ২২৬% ও ২০০% এরূপ উচ্চ সুদের হারে অর্থ লোগ্নি করে। এ সুদ তারা দৈনিক ও সাপ্তাহিক উসুল পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করে। হায় আফসোস! যখন মধ্যবিত্ত বা গরিব সহজ সরলমনা মুসলমানরা বিপদে পরে তখন তাদের এই আগুন লালন করতে গিয়ে অনেক পরিবার ভিটেবাড়ি ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। অনেকে এন.জি.ও দের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে রাগে-ক্ষোভে বিষ পানে আত্মহত্যা করছে। তাদের চাপে পরে অনেকে নিরুপায় হয়ে কোলের ছোট্ট শিশু বিক্রি করে দিচ্ছে। আরো কত কিছু হয়ে যাচ্ছে আমাদের চোখের আড়ালে, অথচ আমরা কিছুই জানিনা। এ ঝড় যার ওপরে বয়ে যাচ্ছে শুধু সেই জানে। এভাবে আমাদের সমাজজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসছে।
এন.জি.ও দের সামাজিক ক্ষেত্রেও অপতৎপরতার শেষ নেই। তাদের আসল উদ্দেশ্যের মধ্যে একটি হল, পারিবারিক ব্যবস্থা এবং দাম্পত্ব সম্পর্ক নষ্ট করা। লক্ষ লক্ষ পুরুষ বেকার ও কর্মহীন থাকা সত্ত্বেও নারীদের রাস্তায় নামিয়ে দিচ্ছে, আর তাদেরকে খোলামেলা চলতে উৎসাহিত করছে। কোমলমনা নারীদেরকে কর্মসংস্থানের জন্য স্বামীর ঘরের আরাম থেকে বের করে মাঠে বাজারে কাজে লাগাচ্ছে, তাও আবার স্বল্প মুজুরীতে। এ স্বাধীনতা দিয়ে তারা বলছে নারী অধিকার। মানে প্রাপ্য অধিকার দিচ্ছে তারা।
এবার তাদের অবস্থা তুলে ধরা হলে দেখা যাবে অবলা রমণীদেরকে স্বেত চামড়ার এন.জি.ও কর্মকর্তাদের সেবা ও মনোতুষ্টির মত হীন কাজে ব্যবহার করছে। এভাবে এন.জি.ও গুলো মহিলাদেরকে স্বামী থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অনেক এলাকায় আবার এর কথায় স্ত্রীরা স্বামীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অফিসে গিয়ে এন.জি.ও কর্মকর্তাদের সাথে..... করে বেড়াচ্ছে। আর এ কারণে স্বামী স্ত্রীর মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে কত কত বিরল কাহিনী। এন.জি.ও কর্মকর্তারা ‘স্বামী স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে প্রহার করছে’ এ ধরণের ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে এবং এরকম নির্যাতনের কাহিনী শুনিয়ে মহিলাদেরকে স্বামীদের বিরুদ্ধে গরম করে তুলছে। এর পরিনাম স্বরূপ বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে অনেক সংসার ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যেনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাদের তালাক দেয়া হচ্ছে তাদেরকেও ছাড়ছে না, তাদেরকে ‘ফ্রী লিগেল এইড’ দিচ্ছে। যার ফলে তারা বিচ্ছিন্ন হওয়াটাকে ভয় পাচ্ছে না। অবশেষে সেই নারীরা খ্রিস্টানদের খপ্পরে পড়ে খ্রিস্টান হচ্ছে নয়তো পশ্চিমা জীবনধারায় নিজেকে পরিচালিত করছে। যদি বুঝতো এ নারী জাতি, তাদেরকে স্বাধীনতার নামে নির্মমভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে এই নিকৃষ্ট সংস্থাগুলো।
মিশনারীদের মূল লক্ষ্য হলো যে, কিভাবে ইসলাম ধর্মের বারটা বাজাবে? এরা উঠেপড়ে লেগেছে যে মুসলমানদের কিভাবে খ্রিস্টধর্মে রূপান্তরিত করবে। শিক্ষা প্রদানের নামে এন.জি.ও পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা শিশুদেরকে মগজ ধোলাই করছে, তারা জায়গায় জায়গায় ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠা করছে। বড় সতর্কতার বিষয় কিন্তু! তারা ইসলামের বিরুদ্ধে যা পারছে শিক্ষা দিচ্ছে। তারা বলে ‘মুহাম্মদের চাইতে ঈসা বড় আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়েত করার অধিকার নেই’। (নাউযুবিল্লাহ্) যদিও তারা নিজেদেরকে সাধু বলে দাবি করে। শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জোরেশোরে সারা বাংলায় ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক প্রোপাগান্ডা ও তথ্য সন্ত্রাস চালাচ্ছে। তারা ‘মুসলমান মানে দরিদ্র আর খ্রিস্টান মানে ধনবান’ বলে দরিদ্র ভাইদের বুঝ দিচ্ছে তাদের পিছে অর্থ ঢালছে। আর এভাবেই তারা চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজাতিকে খৃস্টধর্মে রূপান্তরিত করে ফেলেছে। এছাড়া খ্রিস্টান মিশনারীরা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইসলামের ধর্মীয় আকিদা-বিশ্বাসের বিকৃত ব্যাখ্যা করা বইপত্র দেশের আনাচে-কানাচে বিনামূল্যে বিতরণ করছে। এসব বইয়ের মূল বক্তব্য হলো ‘ইসলামের নবী শান্তির দূত নন বরং তিনি একজন যোদ্ধা’। ইসলাম মানবতার মুক্তি দিতে পারে না, পরকালেরও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারে না। পক্ষান্তরে খ্রিস্টধর্ম দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ বিধান করে, এ ধর্মে রয়েছে মহিলাদের জন্য শালীনতা তথা বেপর্দা ঘোরাফেরা করা, আর যে কারো সাথে মেলামেশা করা। এভাবে দুর্বল মুসলমানদের ধোঁকা দিয়ে খ্রিস্টান বানানোর অপকৌশল অবলম্বন করছে। যার ফলে মুসলমান ইসলামধর্ম ছেড়ে খ্রিস্টধর্মে প্রবেশ করছে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে এন.জি.ও রা, ‘জজ ম্যাজিস্ট্রেট থাকে ঘরে মোল্লা এখন বিচার করে’ এ ধরনের কটুক্তিমূলক চরম বিষয় পোষ্টার, ব্যানার দিয়ে মহিলাদেরকে আলেম সমাজের বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়েছে। বাস্তবতা হলো এন.জি.ও দের কার্যক্রম গোটা দেশব্যাপী চলছে।
এক সমীক্ষায় দেখা যায় ২৫৫টি গ্রামের জন্য রয়েছে একটি এন.জি.ও সংস্থা। তাই তাদের অপতৎপরতার পরিধিও ব্যাপক যা এ ছোট আলোচনায় লিখে শেষ করা সম্ভব না। আর তা হবেই না কেন, খ্রিস্টান মিশনারীদের ১৯৯২ পর্যন্ত তথা প্রায় ২০ বছরের প্রচেষ্টায় খ্রিস্টান জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে পঞ্চাশ লাখে উন্নীত হয়েছে। টার্গেট ছিল ২০০০ সাল নাগাদ এক কোটিতে উন্নিত করা। যা আমাদের জন্য ভয়াবহ বিষয়। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে পাওয়া যায়, বর্তমানে রেজিস্টিকৃত বা অরেজিস্ট্রিকৃত দেশি-বিদেশি ও ইসলামী অনৈসলামী সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার এন.জি.ও বাংলাদেশে কার্যরত রয়েছে। তবে এর মধ্যে ২২/১১/০৩ ইং সন পর্যন্ত রেজিস্ট্রিকৃত বিদেশি এন.জি.ও র সংখ্যা ১৮০টি, আর দেশী এন.জি.ও র সংখ্যা ১৬৪৩টি। মোট এন.জি.ও র সংখ্যা ১৮২৩। অবশেষে বলা যেতে পারে, আমাদেরকে সতর্ক হতে হবে। কেননা, আসল মুমিন তো ওই ব্যক্তি যে কাউকে ধোঁকা দেয় না আবার কারো থেকে ধোঁকার শিকার হয় না।
চমৎকার লেখা, মহান আল্লাহ লেখকের কলমে বারাকাহ দান করুন আমিন ।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য লিখুন