Header Ads

Header ADS

ষাট হাজার বইয়ের সন্ধানে

 

বই কী?

বই হলো, সভ্য পৃথিবীর গর্বিত পথপদর্শক, সুন্দর সমাজ দেশ ও রাষ্ট্র গঠনের সুমহান আলোকবর্তিকা; কালে কালে যুগে যুগে আলোকিত অগনিত মনিষী গড়ার দরদী কারিগর এবং অসত্যের বিরুদ্ধে বিপ্লবী শত শত চিন্তা-চেতনার আপোষহীন বাতিঘর। বই নিয়ে আমার কিছু ভাবনা আছে, অনেক সুখকর গল্প; যে গল্পগুলো অন্যরকম, ভিন্নরকম !!

১.

সেই গল্পের ঝাঁপি থেকে আগে একটি গল্প শুনুন, গল্পটি আমার, একান্তই আমার, খুব ছোটবেলায়- জীবনের মানে যখন কিছুই বুঝতাম না। আব্বুর সাথে মসজিদে গিয়ে দেখা হয় এক তুখোড় পাঠক চাচার সাথে, সহজ সরল, প্রৌঢ়ত্বের চাদর গায়ে মুড়িয়ে তিনি নিবিষ্ট মনে কী যেন পড়তেন আর আমি নির্বাক তাকিয়ে পুরো সময় তাকেই দেখতাম শুধু। বিষয়টি চাচার চোখ এড়ায়নি। আমাকে কাছে ডাকলেন, গভীর মমতার সাথে নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করে ঝোলা থেকে একটি বই হাতে তুলে দিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বললেন, এইটা তোমায় হাদিয়া দিলুম। বইটি খুব ছোট ছিল; এখন যার নাম- শিরোনাম, আকার-অবয়ব কোনোকিছুই মনে নেই। কালের অবহেলায় যা হারিয়ে গেছে অজানা শূন্যতায়; আছে শুধুমলিন স্মৃতিখানি আর সেই মামুলি তোহফার অনুপ্রেরণার দাগচিহ্ন। এরপর... পৃথিবীর রঙ অনেক বদলালো, বৈচিত্রতা আসল জীবনের প্রতিটি আঙিকে। কিন্তু এক লহমার জন্য ও বিলীন হয়নি আমার সেই পুরনো পাঠাভ্যাস, হায়াতের অসংখ্য উত্থান-পতনের মাঝেও কাটেনি বই পড়া আর সংগ্রহ করার পবিত্র মুগ্ধতা!! 


২.

আমার বই পড়ার সূচনাটা হয় শৈশব থেকেই; অনেকটাই আগোছালো এবং অবিন্যস্তভাবে, হিফজখানায় ভর্তি হওয়ার পর একটি অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত হই; বই সংগ্রহের রোগ! বই কেনার বাতিক থেকেই যাওয়া হতো বিভিন্ন সভা-মাহফিলের নিম্নবিত্ত স্টলগুলিতে আর দু-চার টাকার গরিবি সংগ্রহ। মোটামুটি তখনই তাযকেরাতুল আউলিয়া, নানান কেচ্ছা-কাহিনীর কিতাব এবং উর্দু উপন্যাসিকদের বিভিন্ন মুগ্ধকর উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠের জগতে প্রবেশ করি আর কিতাবখানার চৌকাঠে পা রাখার পর তা পৌঁছে যায় অনন্যতায়...!

পরের চিত্রটা আরো রঙিন, উজ্জ্বল। দুনিয়াজুড়ে শুরু হয় অভিমানি আর লাশের হাহাকার, করোনা ভাইরাসের ছড়াছড়িতে বন্দিত্বে আটকে পড়ে জনজীবন, আর সেই কয়েকটা দিনই আমার “পাঠ-জীবনের” টার্নিং পয়েন্ট, ফুফাতো ভাই সালমান বাপ্পি ছিলেন একজন সর্বভুক পাঠক, নানা রঙের বিভিন্ন বর্ণের বই ছিল তার সংগ্রহে, সে সময় পড়া হয় আবু তাহের মিছবাহ, আতিক উল্লাহ, এনায়েত উল্লাহ আলতামাস সহ আরো অনেককে, পড়তে পড়তে আমি যখন পৌঁছি মুসা আল হাফিজ পর্যন্ত লকডাউনের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে পৃথিবীতে তখন বইতে থাকে মুক্তির পরিশুদ্ধ আবহাওয়া,এরপর, কিতাব খানায় ভর্তিহওয়ার পর থেকে আজকের দিন পর্যন্ত যে দীঘল সময়ে আমার পাঠপিপাসা দিনকে দিন কেবল বেড়েই চলেছে; সংগ্রহের নেশায় আমার পাঠকমন ঘুরে বেড়িয়েছে বিভিন্ন লাইব্রেরী থেকে পাঠাগারে!! নাস্তার টাকায়, কাপড়ের টাকায়, ভাড়ার টাকায় মিথ্যে কথা বলে বাড়ি থেকে আনা টাকা নিরবধি চলে আমার কিতাব কেনায়।


৩.

জীবনে আমার অতি-সাধারণ একটি আক্ষেপ আছে। বই পড়া এবং সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমি কারো তরবিয়ত পাইনি; পাইনি কোনো দরদী হৃদয়ের কোমল ছায়া, ফলে হেজাযের মুসাফির পথ ধরেছে তুর্কিস্থানের আর....।

নেপোলিয়ান বেনোপার্টকে অবশ্যই চেনেন, ফরাসী বিপ্লবের মহানায়ক অকুতোভয় এই সেনানীর একটি কালজয়ী উক্তি আছে “অন্ততপক্ষে ষাট হাজার বই সংগ্রহে না থাকলে জীবন অচল”। এই মহাকাব্যিক উক্তি আমার জীবনের মোড় পাল্টে দেয়, পরিবর্তন করে দেয় চিন্তা-চেতনার গতি। আমি এখন একজন পুরোদস্তুর স্বাপ্নিক তরুণ। স্বপ্ন দেখি ষাট হাজার বই সংগ্রহের! কিতাবের পাতায় কালো কালির হরফে আমার হায়াতের মহামান্বিত পরিসমাপ্তির; স্বপ্ন দেখি আমি ফিরিয়ে আনব মহামান্বিত সেই বাগদাদী ঐতিহ্য, কেতাবে নূরে নুরান্বিত গর্বের, গৌরবের সেই অর্ধজাহান...!


ইসমাইল যাকারিয়া

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.